
প্রকাশিত: Mon, Jun 3, 2024 3:04 PM আপডেট: Tue, Apr 29, 2025 11:57 PM
হাতের কাছের ঘাসফুল, বাড়ির পাশের নদী
সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু
এদের কাছে প্রকৃতি নেই, সমাজ নেই, পরিবার নেই। দেশটাও দিন দিন নেই হয়ে যাচ্ছে। যাঁরা পঞ্চাশ পার করেছেন এবং ফেসবুকে আছেন, তাঁদের কাছে একটি বিনীত অনুরোধ, যতটুকু পারেন ফেসবুকে স্মৃতিকথাও লিখুন, লিখে যান। আমরা যারা জীবনীগ্রন্থ লিখবার মতো মানুষ নই, লিখলেও পয়সা দিয়ে সেই বই কিনে কেউ পড়বে না, অথচ আমাদের সবারই বিচিত্র রঙে, বিচিত্র অভিজ্ঞতায় সাজানো, মূল্যবান হাজারও স্মৃতি আছে। এই স্মৃতিকথা লিখে যাওয়া অসম্ভব জরুরি একটি কাজ, পবিত্র দায়িত্বও ভাবতে পারেন। বলবেন, কোথায় লিখবেন? ফেসবুকে লিখবেন, নিজের ওয়ালে লিখবেন নিজের শৈশব, কৈশরের স্মৃতি, লিখবেন আপনার গ্রাম, মেলা, খেলা, উৎসব, নদী, ফুল, পাখি, স্কুল, বন্ধু, দুরন্তপনা, শিক্ষক, ঈদ, পূজা। যা, যা মনে আসে সব। লিখুন বাবা, ভাই মা-বোনের সাথে কাটানো হাসি-আনন্দ, দুঃখদিনের কথা। লিখুন আপনার গ্রাম কিংবা বাড়িছোঁয়া নদী, তার স্রোত, পালতোলা ডিঙার কথা। লিখুন বাড়ির পাশের ঝোঁপ-ঝাঁড়ে টুনটুনির বাসার কথা। পোষা গরুটির কথাটাও পারলে লিখুন। যেমন করে পারেন, যে ভাষায় পারেন লিখে যান।
চলতি সময়ের নদী, মাঠ, ফুল, পাখি, মেঠোপথ, প্রকৃতিকে ক্যামেরায় ধরে রাখুন। শৈশব, কৈশরে তুলে রাখা ছবিগুলোকে ফেসবুক আপলোড করুন। কারণ দুদিন পর এসবও থাকবে না, বদলে যাবে, হারিয়ে যাবে। বলবেন কেন, লাভ কী লিখে, ছবি তুলে? নিজেদের কে নো লাভ আছে কিনা জানি না, কিন্তু আমাদের সন্তানদের লাভ আছে, সমাজের লাভ আছে, আমাদের প্রিয় দেশটার লাভ আছে। হয়তো দশ লাইনের একটি স্মৃতিকথাই আপনাকে অনন্ত অমরতা এনে দেবে। শত, সহস্র বছর পরে হয়তো কোনো ইতিহাসবিদ, হয়তো কোনো সমাজবিশ্লেষক আপনার এই ছোট্ট স্মৃতিকথায় ভর করে লিখে যাবেন একালের সুবর্ণদলিল। আপনি, আমি, যারা পঞ্চাশ কিংবা ষাট পেরিয়েছি তারা একটি লম্বাসময় পার করেছি, দেখেছি, জেনেছি প্রচুর। এই আমরাই একসাথে আমাদের অতীত দেখেছি, বর্তমানও দেখছি। আমাদের অতীত যদি হয় সবুজ শষ্পভূমি তাহলে আজকের সময়টি হচ্ছে প্রাণহীন ধূসর মরুভূমি।
এই মরুভূমিতে বড় হচ্ছে আমার, আপনার সন্তান। ওরা শিকড় ভুলে বড় হচ্ছে, ওরা অতীতের সুবাস বঞ্চিত একেকটি যন্ত্র হয়ে বড় হচ্ছে। অঙ্কের হিসাবে চলা, লাভ-লোকসানের পায়ে ভর করে হাঁটা ছাড়া ওরা কিছু শিখছে না। ওদের কাছে বড়মানুষ হওয়ার অর্থই হচ্ছে প্রচুর টাকা আর অমিত ক্ষমতার অধিকারী হওয়া। এদের কাছে প্রকৃতি নেই, সমাজ নেই, পরিবার নেই। দেশটাও দিন দিন নেই হয়ে যাচ্ছে। কেউ এদের বলছে না, বড় হও কিন্তু শিকড়ে দাঁড়িয়ে বড় হও। আপনার, আমার স্মৃতিকথা ওদের শিকড়ের সন্ধান দেবে। আমরা যেমন আমাদের অতীতের সাথে এই বর্তমানকে পাশাপাশি রেখে মেলাতে পারি, তুলনা করে বুঝতে পারি আমরা চলেছি কোথায়। ওরা পারে না। কারণ আমাদের সমাজ, সংসার, প্রকৃতি, অতীতের মানুষেরা, সেই মানুষদের বোধ, বিশ্বাস, লোকাচার, মূল্যবোধ, সংস্কৃতিটা আমাদের সন্তানদের কাছে অনুপস্থিত। আর তাই ধুসর মরুভূমিকেই ওরা স্বর্গোদ্যান ভাবছে, এই ভাবনা ভয়ংকর। আপনার আমার স্মৃতিকথা, ছবি, ওদের অতীত চেনাবে, শিকড়ের ঠিকানা দেবে। তুলনা করবার সামর্থ দেবে। শষ্পভূমির ঘ্রাণ জাগবে প্রাণে প্রাণে। আসুন লিখি, যতটুকু পারি লিখি। দুদশ লাইনে শুদ্ধ করে প্রাণের আলোতে লিখি। শুদ্ধ, সুন্দর করে না পারি ক্ষতি নেই, যদি নাইই পারি, ভুলবাক্য, ভুল বানানে হলেও লিখি। হাতের কাছের ঘাসফুল, বাড়ির পাশের নদী আর গ্রামের মায়াভরা ছবিগুলো ভবিষ্যতের পৃথিবীর জন্য রেখে যাই। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
